সাইলেজ

সাইলেজ একটি ইংরেজি শব্দ যা দ্বারা গো-খাদ্যের বেলায় সবুজ ঘাসের পুষ্টিমান অক্ষুন্ন রেখে একটি নির্দিষ্ট অম্লতায় বা ক্ষারত্বে সংরক্ষিত ঘাসকে বুঝায়।

সাধারণতঃ খড় জাতীয় খাদ্য ব্যতীত সব ধরনের সবুজ ঘাসই অম্লতায় সংরক্ষণ করা হয়। সংরক্ষণের পর বছরের যে কোন সময় সংরক্ষিত ঘাস তুলে সরাসরি গরুকে খাওয়ানো যায়। বর্ষা মৌসুমে প্রাপ্ত সবুজ ঘাসে প্রচুর পরিমাণে জলীয়াংশ থাকে। এ ধরনের ঘাসে সাইলেজ তেমন ভাল হয় না।

তবে এ সমস্ত সবুজ ঘাস বা কলাগাছ কুচির, সঙ্গে শতকরা ১৫ – ২০ ভাগ শুকনো খড়ের স্তর দিলে একদিকে সাইলেজের গুণাগুণ ভাল থাকে অন্য দিকে সাইলেজের নির্যাস চুইয়ে খড়ের খাদ্যমানও বৃদ্ধি করে। এতে একটা বাড়তি সুবিধা হল পরবর্তীতে শুকনো খড় আলাদা করে আর খাওয়নো লাগে না।

খড়ের অভাব থাকলে খড় না দিলেও সাইলেজ করা যাবে। ডাল বা লিগুম জাতীয় ঘাস যেমনঃ খেসারী, মাসকালাই, কাউপি বা হেলেন ডাল, ইপিল ইপিল ইত্যাদি ঘাসও সবুজ অবস্থায় সাইলেজ করে রাখা যায়। এ ধরনের ঘাসে অধিক পরিমাণে প্রোটিন বা আমিষ থাকে বিধায় শুধুমাত্র ডাল জাতীয় ঘাস দ্বারা সাইলেজ করলে ভাল সাইলেজ নাও হতে পারে। এজন্য এ ধরনের ঘাস অডাল বা নন লিগুম জাতীয় ঘাসের ( ভুট্টা, নেপিয়ার ইত্যাদি) সাথে সর্বোচ্চ ১:১ এবং সর্বনিম্ন ১:৩ অনুপাতে মিশিয়ে চিটাগুড় দিয়ে সাইলেজ করা ভাল। নন-লিগুম জাতীয় ঘাস না পাওয়া গেলে শুকনা খড়ের সাথে মিশিয়েও সাইলেজ তৈরী করা যায়।

 

সাইলেজ তৈরী পদ্ধতি

সবুজ ঘাসের শতকরা ৩ – ৪ ভাগ চিটগুড় মেপে একটি চাড়িতে নিতে হবে। তারপর ঘন চিটাগুড়ের মধ্যে ১ঃ১ অথবা ৪:৩ পরিমানে পানি মিশালে ইহা ঘাসের উপর ছিটানো উপযোগী হবে। ঝরনা বা হাত দ্বারা ছিটিয়ে এ মিশ্রণ ঘাসে সমভাবে মিশাতে হবে। সাইলোর তলায় পলিথিন দিলে আগে বিছিয়ে নিতে হবে। পলিথিন না দিলে পরু করে খড় বিছাতে হবে। এরপর দু’ পার্শেব পলিথিন না দিলে ঘাস সাজানোর সাথে সাথে খড়ের আস্তরণ দিতে হবে। এরপর পরতে পরতে সবুজ ঘাস এবং শুকনো খড় দিতে হবে।

প্রতি পরতে ৩০০ কেজি সবুজ ঘাস এবং ১৫ কেজি শুকনো খড় দিতে হবে। ৩০০ কেজি ঘাসের পরতে পূর্বের হিসাবে ৯ – ১২ কেজি চিটাগুড় ও ৮ – ১০ কেজি পানির মিশ্রণ ঝরনা বা হাত দিয়ে সমভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। খড়ের মধ্যে কোন চিটাগুড় দিতে হবে না। এভাবে পরতে পরতে ঘাস ও খড় সাজাতে হবে। যত এঁটে ঘাস সাজানো হবে তত সুন্দর সাইলেজ তৈরী হবে। এভাবে সাইলো ভর্তি করে মাটির উপরে ৪ – ৫ ফুট পর্যন্ত ঘাস সাজাতে হবে। ঘাস সাজানো শেষ হলে খড় দ্বারা পুরু করে আস্তরন দিয়ে সুন্দর করে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। সর্বশেষে ৩ – ৪ ইঞ্চি পুরু করে মাটি দিতে হবে। সম্পূর্ণ ঘাস এক দিনেই সাজানো যায়। তবে বৃষ্টি না থাকলে প্রতিদিন কিছু কিছু করেও কয়েক দিন ব্যাপি সাইলেজ তৈরী করা যায়। নীচু জায়গায় সাইলো করা যাবে না। তাতে পানি জমে সাইলেজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

  • উপরের পলিথিন সুন্দর ভাবে এঁটে দিতে হবে যাতে কোন পানি সাইলেজের মধ্যে না ঢুকে।
  • চিটাগুড় পাতলা হলে পরিমাণ বাড়িয়ে পানি কম করে মিশাতে হবে। বেশী পাতলা হলে ঘাস হতে চুঁইয়ে নীচে চলে যাবে। এমনভাবে দ্রবন তৈরী করতে হবে যাতে আঠার মত ঘাসের গায়ে লেগে থাকে।
  • ঘাস এবং খড় এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে ফাঁকা জায়গাগুলো যথাসম্ভব বন্ধ হয়ে যায়।
  • সাইলোর কোনগুলো এবং পাশ সমূহ পা দিয়ে পাড়িয়ে ঘাস সাজাতে হবে যাতে ফাঁকা বন্ধ হয়ে যায়।
  • ঘাসের সাথে খুব বেশী পানি থাকা বাঞ্চনীয় নয়।